মনির হোসেন জীবন, বিশেষ সংবাদদাতা ।। রাজধানীর ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ স্পাই ডিভাইসসহ দুই জনকে আটক করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এয়ারপোর্ট এপিবিএন পুলিশ বলছে, আটককৃতরা হলো- শাহারুন আলী (৩৮) ও মোঃ ইকবাল হোসেন জীবন (৩৫)।
আটককালে তাদের নিকট থেকে ৭৬ পিস ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস, ৫০ পিস ইয়ারপিস, ০৩ পিস ল্যাপটপ ও ০৬ পিস মোবাইল ফোন উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে এবং পরবর্তীতে বহিরাঙ্গন এলাকা থেকে বের হবার সময় বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্পাই ডিভাইসসহ দুইজনকে আটক করা হয়। এরপর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর, ২০২৫) বিকেলে এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অপারেশনাল কমান্ডার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক স্পাই ডিভাইসসহ দুই জনকে আটকের বিষয়টি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত অবৈধ ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ শুক্রবার সকালে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের নিকট থেকে ৭৬ পিস ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস, ৫০ পিস ইয়ারপিস, ০৩ পিস ল্যাপটপ ও ০৬ পিস মোবাইল ফোন উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, গ্রেফতারকৃত শাহারুন আলী (৩৮) সাধারণ যাত্রীবেশে চীন থেকে এই ডিভাইসগুলো আনয়ন করে এবং পরবর্তীতে এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত চক্রের আরেক সদস্য মোঃ ইকবাল হোসেন জীবন (৩৫) সহ একসাথে এয়ারপোর্ট ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই স্পাই ডিভাইসগুলো বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকে ক্রেডিট কার্ড সদৃশ ডিভাইস, অদৃশ্য ইয়ারপিস এবং স্বচ্ছ এক্সট্রাকশন থ্রেড। মূল ডিভাইসটি দেখতে ক্রেডিট কার্ড সদৃশ হওয়ায় এগুলোকে সহজে সনাক্ত করা যায় না। এই স্পাই ডিভাইসগুলো সিমের মাধ্যমে সংযুক্ত করে অসাধু পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার হলে নিয়ে যায় এবং অপর প্রান্তে যুক্ত থাকে পরীক্ষা জালিয়াত চক্রের সদস্যরা।
ক্রেডিট কার্ড সদৃশ ডিভাইসটি সিমের সাথে সংযুক্ত করে শরীরের কাছে রাখলে বা ঝুলিয়ে রাখলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনকামিং কল রিসিভ করে। অদৃশ্য ইয়ারপিস খুব ছোট হয় যা কানের গহ্বরে প্রবেশ করানো হয় এবং বাহির থেকে বোঝা যায় না। এর মাধ্যমে পরীক্ষার হলের বাইরে থাকা অসাধু চক্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পরীক্ষা শেষে অসাধু পরীক্ষার্থীরা স্বচ্ছ এক্সট্রাকশন থ্রেডের মাধ্যমে ইয়ারপিসটি নিরাপদে বের করে আনে।
এপিবিএন পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক আরো জানান, এই ডিভাইসগুলো আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য এবং ইতিপূর্বে জালিয়াতির কাজে অসাধু ব্যক্তিরা নিয়োগ পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষায় ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, আমরা যেকোনো অসাধু কার্যক্রম ঠেকাতে নিয়মিত ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এঘটনায় আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর, ২০২৫) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন এর ২৫ বি এর ১ (বি)/২৫-ডি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।