ঢাকারবিবার , ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  1. Bangla
  2. chomoknews
  3. English
  4. অপরাধ
  5. অভিনন্দন
  6. আমাদের তথ্য
  7. কবিতা
  8. কর্পরেট
  9. কাব্য বিলাস
  10. কৃষি সংবাদ
  11. খুলনা
  12. খোলামত
  13. গল্প
  14. গাইড
  15. গ্রামবাংলার খবর
আজকের সর্বশেষ

মহাসংকটে সুন্দরবন, দস্যু বাহিনী বেড়ে যাওয়ায় বনজীবীদের জীবনে অন্ধকার

চমক নিউজ বার্তা কক্ষ
ডিসেম্বর ৭, ২০২৫ ৬:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মহাসংকটে সুন্দরবন, দস্যু বাহিনী বেড়ে যাওয়ায় বনজীবীদের জীবনে অন্ধকার

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে ।। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে র‌্যাব কোষ্টগার্ডের অব্যাহত অভিযান সত্ত্বেও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দস্যুমুক্ত সুন্দরবনে এখন আবারও দস্যুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।যে সুন্দরবন ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর দস্যুমুক্ত ঘোষনা করা হয়েছিলো সেই বনে গত বছর থেকে শুরু হয় অশান্তি।

এবছর জানুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে সুন্দরবনে বিভিন্ন দস্যুবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মোট ২৬টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৬৪টি দেশীয় অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামাদি, ৩৭৬ রাউন্ড কার্তুজ এবং জিম্মি থাকা ৬ জন নারীসহ ৪৮ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অভিযানে মোট ৪৩ দস্যুকে আটক করা হয়েছে।সুন্দরবনে গত বছরের শেষের দিকে করিম শরিফ বাহিনীর আবির্ভাবে রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে জেলেরা।

এর পর ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে আসাবুর বাহিনী, আনারুল বাহিনী, ছোট সুমন বাহিনী, রাঙা বাহিনী, দুলাভাই বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনীসহ একাধিক ছোট ছোট দস্যুগ্রুপ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে বর্তমানে ২০টি দস্যুবাহিনী সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারন জেলেদের ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায় করছে দস্যুরা। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে এই মুহুর্তে কমপক্ষে ৭টি দস্যু বাহিনী বনজীবীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক।

প্রতি গোনে ডাকাতরা জেলে বাওয়ালীদের কাছ থেকে কোটি টাকার চাদা আদায় করছে। বঙ্গোপসাগরের ফিসিং ট্রলার আটক করে জেলেদের জিম্মি তাদের নিত্যদিনের ঘটনা।এমন পরিস্থিতিতে পেশা বদলাচ্ছেন বনজীবীরা। এর ফলে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় কমেছে অর্ধেকের নিচে। যদিও কোষ্টগার্ড ইতোমধ্যে গত এক বছরে প্রায় ৪৮ জন বনদস্যুকে আটক করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাত দলের হাতে জিম্মি অর্ধশত জেলেকে। এসময় কোষ্টগার্ড বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারূদ উদ্ধার করে।

সূত্রমতে, বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। ৫ আগষ্টেরপর সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে পালানো দাগি আসামি এবং ৭ বছর আগে আত্মসমর্পণ করা বনদস্যুরা সুন্দরবনে গিয়ে শুরু করেছে নতুন করে দস্যুতা। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় লুট হয়ে যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ, মিয়ানমার এবং ভারতের সীমান্ত থেকে বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ও দেশীয় তৈরী অস্ত্র সংগ্রহ করে ডাকাত বাহিনীগুলো এখন সুন্দরবনের অঘোষিত সম্রাট সেজেছে।

সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার। এ বন শুধু প্রকৃতির জন্য নয়, হাজারো জেলের জীবিকার ভরসাস্থল। কিন্তু আজ সেই সুন্দরবনই জলদস্যু ও বনদস্যুদের তৎপরতা বাড়ায় জেলেদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সুন্দরবনে জেলে অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন। সেই বনে আবারও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে বনদস্যু দল। অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে সুন্দরবন।

বনজীবী সমিতির নেতা আব্দুল গফুর বলেন, প্রশাসনের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। যদি সত্যিকারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভূমিকা নিতো তাহলে সুন্দরবনে ডাকাতে সয়লাব হতো না। বর্তমানে সক্রিয় ২০টি বাহিনীর মধ্যে রয়েছে শরীফ বাহিনী, মামা-ভাগ্নে বাহিনী, আছাবুর বাহিনী, মজনু বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও রাঙ্গা বাহিনীর নাম উঠে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, জিম্মি করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়- এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।

জানা গেছে, আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু আলিম বাহিনীর প্রধান আব্দুল আলিম, মিলন, জিয়া, জনাব ও নুরু বর্তমানে ভারতে বসে চাঁদা দাবি করছে। গত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত থাকলেও বর্তমানে দু-একটি বাহিনী নতুন নামে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

৫ আগস্টের পর থেকে গত এক বছরে কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৩৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৩টি দেশীয় অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও ককটেল উদ্ধার হয়েছে। মুক্ত করা হয়েছে জিম্মি থাকা অর্ধশত জেলেকে। আটক করা হয়েছে ৪৮ জন ডাকাত ও তাদের সহযোগীদের। আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের কেউ কেউ আবার জড়িয়ে পড়ছে আগের অপরাধে।

বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, সুন্দরবনের বনদস্যুরা কয়েক দফায় আত্মসমর্পণ করে আলোর পথে ফিরেছিল। ২০১৬ সালে সুন্দরবনের সাতটি বনদস্যু দল একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করে। সে সময় ৩২ জন বনদস্যু অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করে। এরপর ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর ৯টি বনদস্যু বাহিনীর ৫৭ জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে। পরে আরেক দফায় ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর আরো ২৫ জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে। প্রায় শতাধিকের বেশি বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, যার কারণে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়।

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘বনদস্যুরা সাধারণত বনজীবী কিংবা জেলে বাওয়ালিদের ছদ্মবেশে সুন্দরবনের প্রবেশ করে দস্যুতায় জড়িয়ে পড়ে। এসব বনদস্যুদের ডাটাবেজ তৈরি করে তাদেরকে ডিজিটালাইজড করতে হবে, যাতে সহজেই তাদেরকে চিহ্নিত করা যায়।

তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত করতে হবে। সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এটি শুধু একটি নিরাপত্তার ইস্যু নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের দিকেও ইঙ্গিত করছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে এই প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর উপর নির্ভরশীল মানুষের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।সম্প্রতি জামিনে মুক্ত এক বনদস্যু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাজনদের সঙ্গে ডাকাতদের চুক্তি থাকে নির্দিষ্টসংখ্যক নৌকার জন্য। যাঁদের আগাম চাঁদার টোকেন থাকে, তাঁরা রেহাই পান, আর বাকিদের আটকে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।

বনদস্যুটি বলেন, আটকে পড়া জেলেদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন মহাজনেরা। দর-কষাকষি করে মুক্তিপণের টাকা পাঠান মূলত তাঁরাই। কিন্তু সেই ‘উপকারে’ জেলে পড়ে যান ঋণের ফাঁদে। পরে দিনরাত মাছ-কাঁকড়া ধরে মহাজনের ঋণ শোধ করতে হয়।

কয়রার মঠবাড়ি গ্রামের আত্মসমর্পণকারী দস্যু আনারুল ইসলামের মতে, কোম্পানি মহাজনেরা দস্যুদের টাকা দিয়ে জেলেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। ডাকাত শুধু জঙ্গলে নয়, ডাঙার ব্যবসায়ীরাও এখন আরেক রকমের ডাকাত।

গত ২৯ জুলাই সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা। সভায় কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক বলেন, স্থানীয়ভাবে ‘কোম্পানি মহাজন’ নামে পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি বনদস্যুদের সহযোগিতা করছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তিনি আবু সাঈদ, মিন্টু, নুর হোসেন, মোশাররফ ও আমিরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করেন।

তাঁরা প্রত্যেকেই পরে প্রথম আলোকে বলেছেন, অভিযোগটি সত্য নয়। তবে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণার আগেও এঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ছিল। এমনকি অনেকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করে নৌবাহিনী। কয়রা কন্টিনজেন্ট কার্যালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, বনদস্যুদের অস্ত্র সরবরাহ, বনদস্যুদের খাবার সরবরাহ এবং সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের সিন্ডিকেট পরিচালনার অভিযোগে আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে গত ৩ আগস্ট বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের পাশে আবু সাঈদের সঙ্গে দেখা হয়। জামিনে মুক্তি পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। একসময় সুন্দরবনে তাঁর সামান্য ব্যবসা ছিল; গত বছর সরকার পতনের পর সে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সুন্দরবনে দস্যুদের পৃষ্ঠপোষক কোম্পানি মহাজন কারা, এ নিয়ে উপকূলজুড়ে বিভ্রান্তি আছে। তবে মোংলা, কয়রা, শ্যামনগর ও দাকোপ উপজেলা ঘুরে সাবেক বনদস্যু ও জেলেদের কথায় কয়েকটি নাম বারবার শুনেছি। এগুলো হলো অয়ন কোম্পানি, আবু সালেহ কোম্পানি, হোসেন কোম্পানি, শহিদুল কোম্পানি, কামরুল কোম্পানি, বিপুল কোম্পানি, মিন্টু কোম্পানি, রিয়াসাদ কোম্পানি, খোকন কোম্পানি ও শাহীন কোম্পানি।

এ ছাড়া বিকাশ কোম্পানি মজনু ডাকাতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বেশ আলোচিত। তবে বিকাশ মারা যাওয়ার পর কোম্পানিটির ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখন তাঁর স্বজনদের হাতে।

বন বিভাগের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেল ভেঙে পালানো কয়েদি এবং চিহ্নিত আসামিরাও যুক্ত হয়েছে এই দস্যুতায়।

সুন্দরবনের দস্যু দয়াল বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে দস্যু দমনের সূচনা হয় ২০১৬ সালে, যখন সবচেয়ে বড় দল ‘মাস্টার বাহিনী’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয় এবং পুনর্বাসনে রাজি হয়। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একাধিক কর্মকর্তা জানান, এরপর আরও ৩২টি দস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৮ জন দস্যু আত্মসমর্পণ করেন, জমা দেন ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গুলি। অবশেষে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সরকার সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করে।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাস্টার বাহিনী, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনী, সুমন বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনী, মুন্না বাহিনী, আনোয়ারুল বাহিনী, দাদা বাহিনী, হান্নান বাহিনী, ছোট রাজু বাহিনী, আল আমিন বাহিনী, সাত্তার বাহিনী, আলিফ বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, শান্ত বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, আলম বাহিনী, মজনু বাহিনী ও শরিফ বাহিনী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সুন্দরবনে আবারও শুরু হয় ডাকাতদের উৎপাত। মুক্তিপণ দিয়ে ফেরা জেলেদের বর্ণনা ও কোস্টগার্ড সূত্রের তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি অস্ত্র হাতে অন্তত ১৪টি দস্যু বাহিনী সুন্দরবনজুড়ে তাদের উপস্থিতির জানান দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায় চিহ্নিত মজনু, করিম শরীফ, দয়াল, রবিউল, আবদুল্লাহ, মামা-ভাগনে, আসাবুর, দুলাভাই, আল আমীন, জাহাঙ্গীর, আফজাল, কাজল-মুন্না, রাঙ্গা ও ছোট সুমন বাহিনী জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। এর মধ্যে ৭টি নতুন।

বন বিভাগের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেল ভেঙে পালানো কয়েদি এবং চিহ্নিত আসামিরাও যুক্ত হয়েছে এই দস্যুতায়। যেমন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি গ্রামের আবদুল্লাহ তরফদার (৪২) নারী পাচার মামলায় কারাগারে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাতে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার ভাঙচুর করা হলে সেখান থেকে পালিয়ে যান আবদুল্লাহ। পরে সুন্দরবনে প্রবেশ করে বনদস্যুতায় নামেন। আবদুল্লাহর সঙ্গে ১০-১২ জনের একটি দল রয়েছে। তাঁদের অধিকাংশ কারাগার থেকে পালানো।

খুলনার কয়রা উপজেলার আনারুল ইসলাম একসময় ছিলেন কুখ্যাত বনদস্যু। ‘আনারুল বাহিনী’ জেলেদের কাছে ছিল বাঘের মতোই ভয়ংকর। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তিনি দলবলসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

আনারুল বলেন, পুনর্বাসনের জন্য সরকার এক লাখ টাকা করে দিয়েছিল। কিন্তু একাধিক মামলার কারণে নিয়মিত আদালতে ঘুরতে হয়। সরকারের প্রতিশ্রুত মামলামুক্তির বিষয়টি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরা লোকজন ভালো থাকার চেষ্টা করছে। তবে যারা ভালো হতে চায় না, তাদের শত সুযোগ দিয়েও পরিবর্তন হয় না।

গত ১৬ আগস্ট সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ বাজারে কথা হয় আত্মসমর্পণকারী বনদস্যু আলম সরদারের সঙ্গে। তিনি বললেন, তাঁর পরিচিত অনেক আত্মসমর্পণকারী আবারও দস্যুতায় ফিরে গেছে। দুজন তাঁকে বারবার ফোন করে তাদের দলে যেতে বলেছে, ‘কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার আর অন্ধকারে ফেরার পথ নেই।’ তিনি বলেন, পুনর্বাসনের টাকায় পুরোনো একটি ইজিবাইক কিনে সেটা চালিয়ে ভালোই আছেন।

কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার আর অন্ধকারে ফেরার পথ নেই। কোস্টগার্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, কয়রার আল আমিনও আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল তিনি অস্ত্রসহ কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়েন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার দস্যুতায় নামেন। একইভাবে ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করা করিম শরীফও আবার বনে সক্রিয় হয়েছেন। সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় লোকজন জানান, আত্মসমর্পণকারী মিলন পাটোয়ারী মজনু বাহিনীর সঙ্গে দস্যুতায় ফিরেছেন। শ্যামনগরের গাবুরার একজন ভুক্তভোগী জেলের ভাষ্য, এলাকার খোকাবাবুও আবার দস্যুতায় নেমেছেন।

দস্যুতায় ফেরা আসাবুর বাহিনীর প্রধান আসাবুর সানাসহ (৪২) দুই ডাকাতকে গত বছরের ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের ঠাকুরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কোস্টগার্ড। তাঁদের কাছ থেকে দুটি একনলা বন্দুক ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়।

গ্রেপ্তারের পর আসাবুরকে লোকালয়ে আনা হলে নদীর তীরে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। তখন মুঠোফোনে তোলা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কোস্টগার্ডের নৌকায় দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে আসাবুর বলছেন, ‘আমি আসাবুর, মৃত্যুর আগপর্যন্ত ডাকাতি করব।’

জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও অস্ত্র হাতে বনে নেমেছেন আসাবুর। গত ৪ আগস্ট সুন্দরবনের শিবসা নদীর শরবতখালী এলাকায় তাঁর সদলবলে অবস্থানের খবর পেয়ে অভিযান চালায় কোস্টগার্ড। আসাবুর পালিয়ে যান, তবে তাঁর দলের দুজন আটক হন। উদ্ধার করা হয় তিনটি একনলা বন্দুক, ১০ রাউন্ড তাজা গুলি ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি।

কিন্তু সুন্দরবনে দস্যুদের হাতে অস্ত্র পৌঁছায় কীভাবে? আত্মসমর্পণকারী কয়েকজন সাবেক বনদস্যু আমাকে বলেছেন, এগুলো আসত মূলত দেশের বিভিন্ন জেলার বৈধ অস্ত্রের দোকান থেকে। বৈধ অস্ত্রের আড়ালে চোরাই পথে চলত অবৈধ বেচাকেনা।

দস্যুদের চাহিদা অনুযায়ী আগাম চাঁদা দিয়ে নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছেন দুই জেলে। ৩ সেপ্টেম্বর কয়রা উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদী এলাকায় দোকান থেকে অস্ত্র বের করার পর গায়ে খোদাই করা বৈধ নম্বর মুছে ফেলে চড়া দামে তা বিক্রি করা হতো বনদস্যুদের কাছে। অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার মূল মাধ্যম ছিলেন খুলনা শহরের ব্ল্যাকার বাচ্চু, হাতকাটা সালেহ, বিকাশ বাবু, গালকাটা মাসুদ ও মজনু।

বিকাশ বাবু ও গালকাটা মাসুদ মারা গেছেন। দস্যুতায় ফিরে আসা দয়াল বাহিনীর এক সদস্য বলেন, শহরের বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র কারবারির কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। সেগুলো পাশবালিশ বা তোশকের মধ্যে ঢুকিয়ে বাসে করে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় আনা হয়। তিনি বলছেন, অস্ত্র কেনার জন্য তাঁর মূল যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছেন ডাকাত মজনু। মজনুই অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন। প্রতিটি অস্ত্র কিনতে লাখ টাকার বেশি খরচ হয়।

এ বিষয়ে মজনুর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। যাঁদের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি, তাঁরা বলেছেন তিনি তাঁর সময়মতো যোগাযোগ করবেন।

সুন্দরবনের যে দস্যুদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা বলছেন, এই দফায় মজনু নতুন দল গড়ে বনে নামার পর অনেকে তাঁর মাধ্যমে অস্ত্র নিয়েছেন। প্রথামতো দেওয়া টাকার একটা বড় ভাগ নেন অস্ত্র জোগানদাতা বাহিনীর প্রধান নিজে।

একজন নব্য ডাকাত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অস্ত্রের দোকানে যাঁরা মেকানিক্যাল কাজ করেন, তাঁরা আসল বন্দুকের মতো বন্দুক বানাতে পারেন। কেউ কেউ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও মালামাল নিয়ে সরাসরি সুন্দরবনে এসে বসে অস্ত্র তৈরি করে দিয়েছেন।

দস্যুজগতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখাকে বলে ‘চাপানো’। ড্রাম বা পাইপে সংরক্ষণ করে মাটির নিচে বা খালের তলায় পুঁতে রাখা হয় অস্ত্র। জায়গাটি চেনেন কেবল ডাকাত সর্দার বা তাঁর বিশ্বস্ত কেউ। অনেক আত্মসমর্পণ করা দস্যুকে বলতে শুনেছি, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্রসফায়ারে যাওয়া শতাধিক দস্যুর অনেকেরই অস্ত্র সুন্দরবনে চাপানো আছে। কিন্তু কোথায়, সেটা কেউ জানে না।

সুন্দরবনের দক্ষিণ দিক দিয়ে বয়ে গেছে রায়মঙ্গল নদী, যা বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। ভারতের সুন্দরবন থেকে নেমে আসা নদীটি প্রথমে মামদো নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়, পরে মাথাভাঙা ও চুনকুঁড়ি নদীর সঙ্গে মিশে মুন্সিগঞ্জের চুনা নদীতে প্রবাহিত হয়।

চুনা নদীর উৎস খোলপেটুয়া, যেটার মধ্যবর্তী দ্বীপ-জনপদ গাবুরা। এর পূর্বে কয়রার বেদকাশী, আর দক্ষিণে খোলপেটুয়া থেকে নেমে গেছে কলাগাছিয়া নদী। কলাগাছিয়া খানিকটা পথ পেরিয়ে মিশেছে মালঞ্চ নদীতে।

মানুষজন বলছেন, এই অঞ্চলজুড়ে দস্যুবাহিনীর আনাগোনা চলে। মল্লাখালী, পুরাতন ঝাপসি, শিবসা নদী, বাওয়ানী খাল, মুচিরদোয়ানি, কামারখোলা, আদাচাইসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় তাদের আস্তানা রয়েছে। ছোট বাহিনীগুলো কখনো নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে দস্যুতা চালায়। তবে এলাকা দখলের লড়াই এবং অস্ত্রের মালিকানা নিয়েও গোলাগুলি এবং সংঘাতও ঘটে।

মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলেরা বলেছেন, দস্যুদের প্রতিটি নৌকায় থাকে একাধিক সশস্ত্র সদস্য এবং একজন বাবুর্চি। দস্যুরা সকাল আর বিকেলে খান। একদল খেতে বসলে বাকিরা পাহারায় থাকেন।

প্রতিটি বাহিনীতে একজন কিছুটা লেখাপড়া জানা মুহুরি থাকেন। তিনি দলনেতাকে দৈনিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন। দস্যুরা চাঁদা ও মুক্তিপণ নেন মূলত বিকাশে। তাঁরা যোগাযোগ রাখার জন্য উঁচু গাছে মাচা বানিয়ে মুঠোফোন ব্যবহার করেন।

তাদের ভাষায় ‘ধরা লোক’ মানে অপহৃত জেলে, ‘টাওয়ার’ মানে ফোনে কথা বলার জায়গা এবং ‘জামিন’ মানে মুক্তিপণ পরিশোধ হওয়া। এক বনদস্যু বলেন, ‘জেলেদের ভয় দেখাই, মারধর করি, কিন্তু এতটাই নয় যে তারা মাছ ধরতে আসা বন্ধ করে দেয়। কারণ, এ জেলেরা আমাদের চালিয়ে রাখে।’

বনজীবী জেলেরা অবশ্য অভিযোগ করেছেন, শুধু বনদস্যুদেরই নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনরক্ষীদেরও নিয়মিত ‘নজরানা’ দিতে হয়।

গত ১৫ আগস্ট সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নাসির উদ্দীনের সঙ্গে দেখা হয় কয়রা সদরে। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সুন্দরবনে চোর-ডাকাত, শিকারি—সব অপরাধ দমন তো আপনাদের দায়িত্ব। কীভাবে সামলান?’

নাসির উদ্দীন বললেন, ‘ডাকাতদের চাপ এত বেশি যে এখন শুধু বেঁচে ফিরতে পারলেই স্বস্তি। যদি ডাকাত না থাকত, অন্য অপরাধ সহজেই দমন করা যেত।’

আরেকজন বনরক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চোখের সামনে অপরাধ দেখি, কিন্তু না দেখার ভান করতে হয়। এখনকার দস্যুরা বনকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, গালিগালাজ করে। অল্প জনবল আর খালি হাতে আমরা তাদের কীভাবে ঠেকাব?’

বনজীবী জেলেরা অবশ্য অভিযোগ করেছেন, শুধু বনদস্যুদেরই নয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনরক্ষীদেরও নিয়মিত ‘নজরানা’ দিতে হয়।

সুন্দরবনের ডাকাত রাঙ্গা বাহিনীর দুই সহযোগীকে অস্ত্রসহ আটক করে কোস্টগার্ড। এ সময় তাদের কাছে জিম্মি থাকা নয় জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন কার্যালয়ে সুন্দরবনের বজবজা টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘গত ২৫ জুলাই খড়খড়িয়া খালে “দুলাভাই বাহিনী” আমাদের টহল বোট ঘেরাও করে গুলি চালায়। বেপরোয়া হয়ে ওঠা ডাকাতদের দমনে এখনই যৌথ অভিযান প্রয়োজন।’

গত ২০ জুলাই শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির চারজন বনরক্ষী বিষ দিয়ে মাছ ধরা আটকাতে গেলে দস্যুদের হামলার শিকার হন। সরকারি পোশাক ছিঁড়ে তাঁদের মারধর করা হয়। ১০ জুলাই কয়রা টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা একইভাবে হামলার শিকার হন।

কয়রা ফাঁড়ির কর্মকর্তা সজল মজুমদার বলেন, ‘দুটি নৌকায় বসে বিষ ছিটাচ্ছিল। আমরা কাছে গেলে নৌকা ফেলে তারা বনের ভেতর পালায়। পরে ছায়ার মতো হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ফিরে এসে হামলা করে।’ তিনি বলেন, নেতৃত্বে ছিল আত্মসমর্পণকারী দস্যু কয়রার হারুন।

প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে ডাকাতদের উপদ্রবকে কিছুটা উদ্বেগজনক বলেছেন। তবে তিনি বলেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এক সমন্বিত বৈঠকে র‌্যাব, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও বন বিভাগকে দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু করতে বলেছেন।

কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন দস্যুকে গ্রেপ্তার এবং ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১২টি।

গত ছয় মাসে সুন্দরবনে দস্যু দমনে কোস্টগার্ডের টানা অভিযান চলেছে। কোস্টগার্ড ১২ সেপ্টেম্বর বনের আদাছগি এলাকা থেকে রাঙ্গা বাহিনীর দুই সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক এবং নয়জন জিম্মি জেলেকে উদ্ধার করে। ৬ সেপ্টেম্বর পশুর নদসংলগ্ন এলাকা থেকে অস্ত্রসহ আটক হয়েছিল সুমন বাহিনীর চার সদস্য।

কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন দস্যুকে গ্রেপ্তার এবং ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১২টি।

কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের ভেতরে সক্রিয় দস্যুদের রুখে দেওয়ার পাশাপাশি দস্যু নির্মূলে ধারাবাহিক ও নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে অপহৃত বহু জেলে ও বাওয়ালিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

৮ সেপ্টেম্বর বনদস্যু কাজল-মুন্না বাহিনীর তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে শ্যামনগর থানার পুলিশ। উদ্ধার করে জিম্মি দুজন জেলেকে এবং মুক্তিপণের ৭৪ হাজার টাকা।

গত ২৩ জুন শ্যামনগরের সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় জনতা অস্ত্রসহ দুই দস্যুকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ২৭ জানুয়ারি বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবনসংলগ্ন জলসীমায় জলসীমায় মাছ ধরা ট্রলারে ডাকাতির সময় জেলেরা মজনু বাহিনীর তিন সদস্যকে অস্ত্রসহ ধরে কোস্টগার্ডের কাছে দিয়েছিল।

সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, তাঁরাও জেলেদের অপহরণের খবর পান। বনের তক্কাখালী এলাকায় বনদস্যুদের সঙ্গে বনরক্ষীদের গোলাগুলিও হয়েছে। আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একসঙ্গে অভিযান চালাত, তাতে দ্রুত বনদস্যুদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যেত।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলা সদর দপ্তরের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মুনতাসীর ইবনে মহসিন বলেন, এবছর জানুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে সুন্দরবনে বিভিন্ন দস্যুবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মোট ২৬টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৬৪টি দেশীয় অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামাদি, ৩৭৬ রাউন্ড কার্তুজ এবং জিম্মি থাকা ৬ জন নারীসহ ৪৮ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অভিযানে মোট ৪৩ দস্যুকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। কেউ যাতে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বন্যপ্রাণী নিধন করতে না পারে সেদিকে কোস্টগার্ডের বিভিন্ন স্টেশনে অবস্থানরত সদস্যরা নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে।

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ অভিযানে কোস্টগার্ডের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৭২০ কেজি হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা, পা এবং ৪০০টি হরিণের ফাঁদসহ ২৪ জন হরিণ শিকারিকে আটক করেছে।