বাংলাদেশি মাহিনকে আমেরিকায় অনধিকার প্রবেশে মার্কিন আইস পুলিশ আটক করেছে
সন্তোষ মল্লিক, কানাডা ।। মাহিন শাহরিয়ার নামে এক বাংলাদেশি যুবককে আমেরিকায় অনধিকার প্রবেশের কারণে মার্কিন আইস পুলিশ আটক করেছে । তাকে নিয়ে বিস্তারিত এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কানাডার মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সিপি-২৪।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাহিন শাহরিয়ার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো শহরে মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) হেফাজতে রয়েছেন। তিনি কানাডায় শরনার্থী আবেদনকারি ছিলেন। মাহিন শাহরিয়ার দাবি করেছেন, ভুলবশত সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
এখন কানাডা তাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না। মাহিন শাহরিয়ার দ্য কানাডিয়ান প্রেসকে জানিয়েছেন, তিনি ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, যা তিনি এখন মানবপাচারের প্রচেষ্টা হিসেবে মনে করছেন। শাহরিয়ার বলেন, তিনি তখন মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন এবং এক “বন্ধু” তাকে মন বদলানোর জন্য মন্ট্রিয়লের কাছাকাছি কয়েকদিন থাকার প্রস্তাব দেন।
“আমি কিছুদিন বাড়ির বাইরে থাকতে চেয়েছিলাম। তখন সে বলল তার কাছে একটা জায়গা আছে যেখানে আমি থাকতে পারব,” বলেন শাহরিয়ার আইসিই হেফাজত থেকে ফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, সেই বন্ধুর দেওয়া ঠিকানা তাকে এমন এক গ্রামীণ রাস্তায় নিয়ে যায় যা কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের খুব কাছাকাছি ছিল। সে ফোনে ছিল, আর আমাকে নির্দেশ দিচ্ছিল।
সে জিপিএস ব্যবহার করে আমাকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল—কোথায় যেতে হবে, কীভাবে হাঁটতে হবে। হঠাৎ দেখি আমি যুক্তরাষ্ট্রে,” বলেন শাহরিয়ার। আমার ইচ্ছা ছিল না সীমান্ত পার হওয়ার। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর তিনি নিজে থেকেই সীমান্তরক্ষীদের কাছে গিয়ে নিজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। ভেবেছিলেন তারা তাকে কানাডায় ফেরত পাঠাবে, কিন্তু বরং তাকে আটক করা হয়।
১ আগস্ট আইসিই কর্তৃক শাহরিয়ারের আইনজীবী ওয়াশিম আহমেদকে পাঠানো এক ইমেইলে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে শাহরিয়ারকে গ্রহণে বাধ্য করতে পারবে না। শাহরিয়ার ও তার আইনজীবী দুজনেই বলেছেন, আইসিই স্বীকার করেছে যে শাহরিয়ার বাংলাদেশে ফেরত গেলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন—তবুও তাকে সে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। আহমেদ দ্য কানাডিয়ান প্রেসকে বলেন, শাহরিয়ার বাংলাদেশে ফেরত গেলে তাকে আটক ও নির্যাতনের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ তিনি তার মা ও ছোট বোনকে দেশ ছাড়াতে সাহায্য করার অভিযোগে মামলার মুখে আছেন। শাহরিয়ার বলেন, তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর তিনি, তার মা ও বোন কানাডায় পালিয়ে আসেন।
আহমেদ বলেন, বর্তমানে শাহরিয়ারকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না কারণ আইসিই-এর কাছে তার ভ্রমণ নথি নেই। শাহরিয়ার নিজেও কানাডায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। (আইসিই) বলেছে তারা আমাকে কানাডায় ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কানাডা আমার প্রবেশ অস্বীকার করেছে। এরপর তারা কিছু জানায়নি,” বলেন শাহরিয়ার। কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (CBSA) নির্দিষ্ট মামলার বিষয়ে মন্তব্য করে না।
ইমেইলে দেওয়া এক জবাবে সংস্থাটি জানিয়েছে, অন্য দেশে আটক বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করে না। সিবিএসএর মুখপাত্র আরও বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রোটেকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, যে কেউ কানাডায় প্রবেশ করতে চাইলে তাকে সিবিএসএর পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হতে হবে, এবং প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে ক্ষেত্রভেদে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
আহমেদ জানান, আইসিই সিবিএসএর অনুমতি ছাড়া শাহরিয়ারকে সেই পরীক্ষাকেন্দ্রে আনবে না। তিনি বলেন, তিনি এখন কানাডার ফেডারেল কোর্টে জরুরি শুনানির আবেদন করছেন যাতে মানবিক ও সহানুভূতির ভিত্তিতে সিবিএসএ শাহরিয়ারকে কানাডায় ফিরিয়ে আনার অনুমতি দেয়।
“সে কানাডা ছাড়ার আগে যা-ই হোক না কেন তার অবস্থা, সে কানাডার বাসিন্দা ছিল,” বলেন আহমেদ। “সে কানাডার বাসিন্দা, এবং তার মা ও বোন—উভয়েরই এখানে বৈধ আইনগত মর্যাদা রয়েছে। আহমেদ বলেন, সেফ থার্ড কান্ট্রি এগ্রিমেন্ট (Safe Third Country Agreement) অনুযায়ী, সিবিএসএ-র উচিত শাহরিয়ারকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রহণ করা।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় আশ্রয়ের আবেদন করে, এবং আগে অন্য দেশটিতে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তাকে সেই দেশে ফেরত পাঠাতে হবে যেখান থেকে সে এসেছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, কেউ যদি সীমান্ত পার হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে আটক হয়, তাহলে যে দেশ থেকে সে এসেছিল, তাকে সেই দেশই ফিরিয়ে নেবে,” বলেন আহমেদ।
২৪ সেপ্টেম্বর শাহরিয়ার মার্কিন ইমিগ্রেশন নথিতে স্বাক্ষর করেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চান না, কারণ তার মা ও বোন ইতিমধ্যে কানাডায় আশ্রয় পেয়েছেন এবং তার নিজেরও আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন। ২০১৯ সাল থেকে কানাডায় বসবাসরত শাহরিয়ার উবার চালিয়ে তার মা ও বোনকে সহায়তা করতেন। তার মা একজন স্বীকৃত শরণার্থী, আর বোন ফুল-টাইম শিক্ষার্থী।
আহমেদ বলেন, এই পুরো পরিস্থিতি শাহরিয়ারের পরিবারের ওপর ভয়াবহ মানসিক প্রভাব ফেলেছে। তার মা ইতিমধ্যে মানসিক চাপের কারণে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন,” বলেন আহমেদ। (শাহরিয়ারের বোন) ভীষণ চেষ্টা করছে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে, কিন্তু সে বলেছে হয়তো পড়াশোনা বন্ধ করতে হবে, কারণ সে একসাথে টিউশন ফি, সংসার খরচ ও কাজ সামলাতে পারছে না।
যদিও শাহরিয়ারের মা স্বীকৃত শরণার্থী, তার নিজের প্রথম আশ্রয় আবেদনটি গৃহীত হয়নি। আহমেদ বলেন, শাহরিয়ারের প্রথম আবেদনটি এক প্রতারক ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্টের প্রতারণার শিকার হয়েছিল। ওই প্রত্যাখ্যানের কারণেই তার মানসিক ভেঙে পড়া শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাকে আইসিই হেফাজতে নিয়ে গেছে।
চলতি বছর শুরুর দিকে আহমেদ শাহরিয়ারের পক্ষে কানাডায় পুনর্বাসনের ঝুঁকি মূল্যায়ন আবেদন করেন, যাতে তাকে কানাডায় রাখার সুযোগ তৈরি হয়।যদিও কেউ কেউ মনে করছেন মাহিন স্বেচ্ছায় একাজ করেছেন!