সাইফুল ইসলাম স্বরণ
Interior Designer & photograper
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজার
একজন মানুষের জন্য একটা দেশ ,ধর্ম , সমাজ, রাজনীতি কতখানি দরকার , এগুলো নিয়ে আমরা হয়তো ভাবী না ।এখানকার পলিথিন মোড়ানো মানুষ গুলো নিয়ে একটু ভাবুন !!!
আমার জীবনের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা হচ্ছে রুহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন। জীবনে কত মানুষের ছবি তুলেছি কত ঘটনার সাক্ষী আমার ক্যামেরা। কিন্তু এত স্পর্শ কাতর ঘটনা আগে কখনো দেখিনী। মানবতা কেও হার মানায় মায়ানমারের রুহিঙ্গাদের আর্তনাদ। ত্রান বিতরনের উদ্দেশ্যে মুলতা যাওয়া টেকনাফে। সেখানে গিয়ে আমার মাথায় প্রথমেই যেই প্রশ্ন আসে এখানে রাখাইন থেকে কারা আসছে, কেন আসছে ? শুধু মুসলিমদের উপর এমন অত্যাচার কেন? তাদের কাছ থেকে বর্বরতার কথা শুনে মনে হলো আবার সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে প্রবেশ করেছি আমরা। এক সাথে আমাদের ৩-৪ জন লোক দেখে অনেক রুহিঙ্গা ভিড় জমায় আমাদের পাশে । ত্রান নিতে গিয়ে অনেকে হতাহত হচ্ছে । অনেকে গায়ের জোর খাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একের অধিক ত্রান আবার অনেকে ত্রান পাচ্ছেনা। এক জন ত্রান দিতে ঢুকলে হাজারো মানুষ এগিয়ে আসে ত্রান নিতে। এরই মধ্যে ভিড় ঠেলে দুই জন মানুষ ২৭ বছরের এক যুবকে নিয়ে আসে আমাদের কাছে, এসে তার মাথায় দা দিয়ে কোপের আঘাত দেখালো ।
দেখলাম আর একটু হলে মগজ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পর্দার ভিতর দিয়ে মগজ দেখা যাচ্ছে। অনেক শিশুর হাত ভাঙ্গা, অনেক মহিলাদের পা বেন্ডেজ করা। তারা অনেকে এখনো জানেনা তাদের উপর কেন এমন বর্বরোচিত হামলা হলো। ৫-৭ বছরের অনেক শিশু শরিরের কাদা মাটি নিয়ে ক্ষুদার জ্বালায় ঘুমিয়ে পড়েছে বাশ পলিথিনের ডেরায়। ৭ বছরের থেকে বড় সবাই ছুটছে ত্রান পাবার আশায়। রাস্তা দিয়ে কোন ত্রানের গাড়ি দেখলেই ছুটে যায় সেখানে। এক মুঠো খাবারের আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা। তারা বেশির ভাগই কম শিক্ষিত খেটে খাওয়া নিম্ন বিত্ত শ্রেনীর মানুষ। তাদের চেহারায় যে সরলতার চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে কোন অপরাধ বোধের ছাপ পাওয়া যায়নি। যখন সন্ধ্যে বেলা ক্যাম্প এলাকা থেকে বের হয়ে আসবো তখন দেখলাম একটা মধ্য বয়স্ক লোক ৩ টা গরু টেনে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রি করার জন্য।
জীবনের শেষ সম্ভল তার গরুগুলো বিক্রি করে ঘরে খাবার নিবে। কত দিন চলবে তাদের এভাবে? সর্বপরি রুহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমাদের দেশ এবং সরকার প্রধান যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে তা বিশ্ব দরবারে ভূয়সী প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মান মানবতায় এখন অনেক উপরে। মায়ানমারের সরকার প্রধান অং সাং সূচী যে নিশ্বংসতা করছে তার জবাব বিশ্ব দরবারে একদিন তাকে দিতে হবে। সবশেষে আমি যেটা মনে করি রুহিঙ্গারা যে ভাবে জন শ্রোতের মত বাংলাদেশে তারা প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে সে ভাবে সহজে তাদেরকে এদেশ থেকে মায়ানমারে পাঠানোটা সহজ হবেনা। বর্তমান প্রাথমিক জরিপ অনূযায়ী আগে আসা সব রুহিঙ্গাদের পরিমান হবে আনুমানিক ৫-৭ লক্ষ। তাদের ব্যাপারে বিশ্বের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ দেশ গুলো এগিয়ে না আসলে মায়ানমারের এত রুহিঙ্গারা একটা সময় পরে বাংলাদেশের জন্য বোঝা ও হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে।
সাক্ষাৎকার গ্রহনঃ নুরুল ইসলাম খান ও এস এম আবু কাউসার
স/মা