মানিপ্ল্যান্ট এবং সে…
সালেহ্ বিপ্লব ।।
আপনাদের আগেও বলেছিলাম, আমার টেবিলে থাকা মানিপ্ল্যান্ট গাছটার আচার-ব্যবহার ঠিক জুতের না। খুব মন দিয়ে একটা কাজ করছি, বলা নেই কওয়া নেই, দুম করে বলে ওঠে: ওস্তাদ, বাঁয়ে প্লাস্টিক।
গত কদিন ধরে নতুন ভাও ধরেছে। হঠাৎ করে চিৎকার দিয়ে ওঠে, কাংবাদিক, কাংবাদিক, কাংবাদিক। তার তীক্ষ্ন গলায় পুরো নিউজ রুম কেঁপে ওঠে। সবাই হাসে, আর আমি রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে গাছটাকে শাসাই।
আর এমন আচরণ সে ইচ্ছে করে এবং আমাকে উদ্দেশ্য করেই করে। আমি জিজ্ঞেস করে জেনেছি, আমি রুমে না থাকলে সে কোনো কথাই বলে না। আজ সন্ধ্যায়ও তাই ঘটলো।
মন দিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট দেখছি, মানি প্ল্যান্টের তীক্ষ্ন গলা ব্রহ্মতালু কাঁপিয়ে দিলো। রাগে গজগজ করতে করতে বাগানে গেলাম।
হতচ্ছাড়া, বিটকেল মানিপ্ল্যান্ট! আপনমনেই গজরাচ্ছিলাম। বোধহয় জোরে বলে ফেলেছিলাম, ছাদে যে মানিপ্ল্যান্ট থাকে, সে দুপ করে ধরে বসলো।
ওকি! তুমি আমার ভাইবেরাদারকে গালি দিচ্ছো কেনো?
তখন আমি টেবিলের মানি প্ল্যান্টটার কুকীর্তিগুলো তাকে জানালাম।
ওমা বলতেই যা বাকি, ছাদ বাগানের সব গাছেরা একসাথে হেসে উঠলো। আমি থতমত খেয়ে গেলাম।
তখন গন্ধরাজ আমাকে বললো, পার্টির মধ্যে যেমন কাউয়া ঢুকে গেছে, তেমনি সাংবাদিকদের মধ্যেও কাউয়া ঢুকেছে। এই কাউয়া সাংবাদিকদের আমরা কাংবাদিক বলি। তবে তোমাকে কাংবাদিক বলা ঠিক হয়নি।
আমি বললাম, শুধু কাংবাদিক না, সে আরো খারাপ শব্দ ব্যবহার করে।
এবার নড়েচড়ে উঠলো কাঁটামুকুট। বললো, খারাপ শব্দ তো তোমরা ব্যবহার করো। আমরা গাছেরা বড়োজোর শালা বলে গাল দেই। কিন্তু তোমরা?
আমি একটু রোষের সঙ্গেই শুধালাম, আমরা কী করেছি?
নয়নতারা নাক গলালো এবার। আমাকে প্রশ্ন করলো, আচ্ছা তুমি তো তাসনিয়ার ভক্ত, তাই না?
মাথা নেড়ে সায় জানালাম।
এবার নয়নতারার প্রশ্ন, কেনো?
আমি বললাম, মেয়েটা এই সময়ের দুর্দান্ত এক অভিনেত্রী। মিষ্টি একটা মেয়ে, যতোটা জানি, ভালো একটা মানুষ।
ভালো না কচু? দূর থেকে ডাল বাড়িয়ে বললো বেলী।
প্রশ্ন করলাম, কচু কেনো?
ওরে বাবা! এ প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে বাগানের সব গাছ যেনো বেলীর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে এলো। সবাই শুনতে চায়, কী বলে বেলী!
বেলী একটু রগড় করেই বললো, উহ! ন্যাকা! তাসনিয়া কী করেছে তুমি জানো না? তোমার ফেসবুক ওয়ালেই তো ভিডিওটার লিঙ্ক দেখলাম। তোমার বন্ধু সাইফুল ইসলাম শিল্পী তোমাকে ট্যাগ করেছেন। তুমি সেটা সিন করেছো। তারপরও জানো না কী হয়েছে?
আমি চুপ মেরে গেলাম।
ওই ভিডিও ক্লিপটা কোনো নাটকের। সেখানে তাসনিয়ার সামনেই ভিলেন অবলীলায় বলছে, চোদানির ফোয়া!
এবার মুখ খুললো মানিপ্ল্যান্ট। শোনো সাংবাদিক। তাসনিয়ার মতো আইকন যদি অশ্লীল গালিযুক্ত স্ক্রিপ্ট এলাউ করে, সেখানে আমাদের ভাই মানিপ্ল্যান্ট তো খারাপ কিছুই বলেনি। বলেছে, কাংবাদিক। কাংবাদিক তো চোদানির ফোয়ার চেয়ে একশ কোটি গুণ শ্লীল শব্দ!
আমি কাঁচুমাচু স্বরে বললাম, খিদে পেয়েছে। এক ছুটে ডাইনিং-এ গিয়ে হাঁফ ছাড়লাম।
লেখক
সালেহ্ বিপ্লব
নির্বাহী সম্পাদক
দৈনিক আমাদের নতুন সময়