নিয়ম অ-নিয়মের চলছে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল
মো: রফিকুল ইসলাম মিঠু, ঢাকা।। নানারকম নিয়ম-অনিয়মের চলছে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। এই ডাক্তার আছে তো ঐ ডাক্তার নেই। একটি ওষুধ পাওয়া গেল আরেকটি ওষুধ নেই।
ভর্তিকৃত রোগীদের খাবারের তালিকায় নেই বরাদ্দকৃত খাবারের সুষম বন্টন। সকালের নাস্তায় ১০০ গ্রাম রুটি দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ১০০ গ্রাম রুটি পাওয়া যায় না। একটি ডিম ও একটি সবরি কলার কথা উল্লেখ থাকলেও রোগীরা জানান, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এখন পর্যন্ত একদিনও দেখি নাই।
দুপুরের খাবারে পায়জাম চালের কথা উল্লেখ থাকলেও ব্যবহার করা হয় মোটা চাউল। মুরগিও মাছ ওজনে কম থাকে। রোগীদের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে ফিরে দেখা যায় অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন। দেখলে মনে হবে দিনে একবারও মোছা হয়নি। হাসপাতালে যেখানে সেখানে পড়ে আছে ময়লার বাগাড়।
আর রান্না ঘরের মেঝে ও চুলার আশপাশ দেখলে মনে হবে এটা যেন একটা গোয়ালঘর। হাসপাতালগুলোর টয়লেটে ঢুকলে মনে হবে এই হাসপাতালে কোন ক্লিনার বা সুইপার নেই। রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও রোগীরা জানান দিনের বেলাতেই মশায় কামড়ায় খেতে হয়, রাতের কথা আর কি বলবো। সরেজমিনে ঘুরেফিরে দেখা যায় হাসপাতালে কিছু টয়লেট মনে হয় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে । যার ভিতরে মশা মাছি ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করছে।
এর চেয়েও ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে ২০০১ সাল থেকে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলেও হাসপাতালের গ্যাস সংযুক্তি বৈধ কিনা তার পক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
মাস শেষে গ্যাসের বিল বাবদ কোন অর্থ আছে কিনা তাও বলতে পারছে না কেউ। অন্যদিকে নার্সদের অবস্থা অনেকটা বাপ-মা ছাড়া বাচ্চারমত।
সরকারি চাকরি তো সরকারি চাকরি সরকারিভাবেই চলছে চিকিৎসা সেবা। আর আউটডোর সেবায় সময় মত ডাক্তার পাওয়া যায় না। রোগীরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কেটে ডাক্তারের কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিতরে ডাক্তার থাকলেও তিনি ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ করেন আউটডোর চিকিৎসা প্রাপ্তি রোগীরা।
দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যদিও ডাক্তার দেখিয়ে আবার ঔষধ গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়ান। তাহলে দেখা যায় যে এই ঔষধ আছে তো ঐ ঔষধ নাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাপা প্যারাসিটামল এর মত গুলোই পাওয়া যায়। দামী ঔষধ গুলোর বালাই নেই। টেস্টের ক্ষেত্রেও দেখা যায় এই টেস্ট করা যাবে ঐ টেস্ট করা যাবে না। বাহির থেকে বেশিরভাগ টেস্ট করতে হয়। এমন হাজারো অভিযোগ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
এই সকল বিষয় নিয়ে হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে এড়িয়ে যান। বিনা অনুমতিতে হাসপাতালে বিভিন্ন জায়গার ছবি উঠানোর কারণে তিনি রেগে প্রতিবেদকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
প্রসঙ্গত ২০০১ সালের ১০ ই জুন ৬ নং সেক্টরের ৩৯ নং ইশাখাএভিনিউতে কুয়েতি সংস্থার রিলিফ ফান্ড থেকে একটি হাসপাতাল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ২০০২ সালে কুয়েতি ত্রাণ তহবিল সাহায্য বন্ধ করে দেয়।
আবার ২০০২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমেরিকান সুপার হাসপাতাল নামকরণ করা হয়। ৩০ শে জুন ২০১৮ সালে হাসপাতালটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো ঐ সংস্থাও ব্যর্থ হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার হাসপাতালটির দায়িত্ব বুঝে নেয়।
২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটির দায়িত্ব বুঝে নিয়ে একজন পরিচালক নিয়োগ দেন। ২০২০ সালে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে ২৬ টি আই সি ইউ ৯৫ জন ডাক্তার ১১৩ জন নার্স সহ তিনজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে তিন বিঘা জমির উপর হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। করোনা মহামারীর সময় এই হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও রেখেছিলো।