ঢাকাসোমবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
  1. Bangla
  2. chomoknews
  3. English
  4. অপরাধ
  5. অভিনন্দন
  6. আমাদের তথ্য
  7. কবিতা
  8. কর্পরেট
  9. কাব্য বিলাস
  10. কৃষি সংবাদ
  11. খুলনা
  12. খোলামত
  13. গল্প
  14. গাইড
  15. গ্রামবাংলার খবর

দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

রাহুল রাজ
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ ৮:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

সাবাশ বাংলাদেশ। সাবাশ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছে নেপাল। সোমবার নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতে সাবিনারা স্তব্ধ করে দিয়েছেন কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের উপস্থিত স্বাগতিক দর্শকদের।

ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হল বাংলাদেশ। অল আউট ফুটবল খেলে নেপালী মেয়েদের ডিফেন্স তছনছ করে দিয়েছেন সাবিনারা।

গতকাল ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে মাঠে দর্শকে ছিলো ঠাসা। বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা অনলাইনে উপভোগ করেছেন সাবিনাদের লড়াই। বৃষ্টি ভেজা কর্দমাক্ত মাঠে হতাশ করেন নি কৃষ্ণ রাণী সরকার, রুপা চাকমারা।

হিমালয়ের দেশে সমুদ্রের গর্জন ভেসে উঠেছিল স্বাগতিক দর্শকদের চিৎকার, ভুভুজেলা আর বাদ্যি বাজনার উন্মাদনায়। গ্যালারিতে ছিল মেক্সিকান ওয়েভ। নেপালের পতাকা হাতে, ‘নেপাল’ লেখা টি-শার্ট পরে অনেকে ছবি তুললেন গ্যালারিতে। সবার হাতের মুঠোফোনের আলোয় যেন হাজারো জোনাকি জ্বলে উঠেছিল স্টেডিয়াম।

এমন শ্রোতের বিপরীতে সাবিনারা করেছেন লড়াই। নেপালিদের উন্মাদনা শ্মশানের নীরবতায় নামিয়ে দিলেন। সাবিনাদের গোলে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেলেন দর্শকেরা।

রক্ষণে গোল রক্ষক রুপা চামকা ছিলেন যেন একাই একশ। অতন্দ্রী প্রহরীর ভূমিকায় ঠেকিয়েছেন নেপালের একাধিক আক্রমন। তার এমন কৃতিত্ব ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়াই স্বাভাবিক। শুধু কি তাই, হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরাও। অন্যদিকে বল পায়ে চমক দেখিয়েছেন কৃষ্ণ রাণী সরকার আর শামছুন্নাহার জুনিয়র।

প্রতিপক্ষের জালে তিনবার বল পাঠিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশই সেরা। কৃষ্ণ রাণী সরকার দুটি এবং শামসুন্নাহার জুনিয়র একটি গোল করেন।

তবে ভিজা মাঠে সাবিনাদের নৈপুন্যে বেঘাত ঘটলেও থেমে থাকেনি বিজয়ের কেতন। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেছে দূর্দান্ত। এবং ফাইনালেও রেখেছে সেই ধারাবাহিকতা।
সফরের আগেই কোচ ছোটন তার এই দলটিকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন। গতকাল শীর্ষরা তার প্রতিদান দিলেন ট্রফি উচিয়ে।

কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। ১০ মিনিটে ফুলব্যাক সিরাত জাহানের মাঠ ছাড়া শাপেবর হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। তাঁর বদলে নামা ফরোয়ার্ড শামসুন নাহার জুনিয়র কাজের কাজটি করেছেন। নেমেই তিন মিনিট পরই মনিকা চাকমার ক্রসে বল নেপালের জালে পাঠান শামসুন নাহার।

টুর্নামেন্টে এটিই নেপালের জালে প্রথম গোল। ৪২ মিনিটে নেপালের ভুল পাস থেকে সাবিনা বল পেয়ে যান। সেই বল বাঁ পায়ের শটে ২-০ করে এগিয়ে দেন কৃষ্ণা রানী সরকার।

গত কয়েক দিনে বৃষ্টি হওয়ায় দশরথ স্টেডিয়ামের মাঠ কাদাময়। স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারছিল না দুই দলই। তবে প্রথম গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে নেপাল কিছুটা চাপ তৈরি করে বাংলাদেশের ওপর। এই সময় বাংলাদেশকে রক্ষণ কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বেশি, যা এই টুর্নামেন্টে আগে দেখা যায়নি।

কর্নার থেকে বাংলাদেশ গোলকিপার রুপনা চাকমা ঠিকভাবে বল ধরতে পারেননি। এই সময় গোললাইন সেভ হয়েছে। বড় বাঁচাই বেঁচে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু খেলার ধারার বিপক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

অসুস্থতার কারণে নেপাল দলে নেই তাদের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাবিত্রা ভান্ডারি। ফলে দলটির আক্রমণ কিছুটা গতি হারিয়েছে। তারপরও নিজেদের দর্শকদের সামনে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে গেছেন নেপালের মেয়েরা। কিন্তু বাংলাদেশ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।

দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক নেপাল অত্যন্ত চাপে রাখে বাংলাদেশকে। সেই চাপের ধারাবাহিকতায় ৭০ মিনিটে আনিতা বেসন্ত নেপালকে গোল করে ম্যাচে ফেরান। সংঘবদ্ধ এক আক্রমণে বক্সের মধ্যে প্রবেশ করে কোনাকুনি শটে রুপনা চাকমাকে পরাস্ত করেন।

আক্রমন পাল্টা আক্রমনের খেলায় শেষ দিকে বাংলাদেশ তৃতীয় গোলটি পেয়ে যায়। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রাণী সরকার গোল করেন। ৭৭ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে পাওয়া থ্রুতে তিনি আগুয়ান গোলরক্ষককে দারুণভাবে পরাস্ত করেন। কৃষ্ণার এই গোলের পর বাংলাদেশের জয়ের পথ আরও পরিস্কার হয়ে যায়।

যদিও ম্যাচের বাকি সময় নেপালী মেয়েরা গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে । এ সময় বাংলাদেশ রক্ষণে দারুণভাবে সময় কাটায়। এবং শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে বিজয়ের কৈতন উড়িয়ে মাঠ ছাড়েন সাবিনারা।

এই মাঠেই ১৯৯৯ সালে সাফ গেমস ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল বাংলাদেশ, জুয়েল রানার নেতৃত্বে। যা কিনা বাংলাদেশের ফুটবলে এখনো সেরা অর্জন হিসেবে স্বীকৃতি রয়েছে। এরপর বাংলাদেশের ট্রফি জয়টা অধরাই থেকে যায়।

গতকাল সেই দূর অতীত স্মরণ করিয়ে দিলেন সাবিনারা। সেবার নেপালকে পরাজিত করে বাংলাদেশ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার সেই নেপালেই নারীদের হাত ধরে শিরোপা উদযাপন হলো। হোক না সেটা বয়স ভিত্তিক ফুটবল।

নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে এর আগে একবার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে শিলিগুড়িতে ফাইনালে হেরে যায় ভারতের কাছে। খুব কাছে গিয়েও ট্রফি ছুতে না পারার কষ্ট নারী ফুটবলাদের এতো তাড়া করেছিল। সাবিনাদের হাত ধরে সেই কষ্ট লাগব হয়েছে।

আর তাই ম্যাচ শেষে সাবিনাদের মধ্যে ছিলো অন্তহীন উচ্ছাস। রেফারির শেষ হুইসাল বেজে উঠতেই তাই বিজয়ের আনন্দে মাঠে পাখা মেলে দোড়ালেন সাবিনারা। কোচ ছোটনের বাকরুদ্ধ হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। এতো দিনে তার কষ্টের ফসল মিলেছে নেপালে।

বাংলাদেশের একাদশ:
রুপা চাকমা (গোলরক্ষক) সাবিনা খাতুন (অধিনায়ক) শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার, আঁখি খাতুন, সাসুরা পারভিন, মণিকা চাকমা, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডা, কৃষ্ণা রাণী সরকার ও স্বপ্না জাহান।