জোড়াতালির দল দেখাল বাস্তবতা
রাহুল রাজ ।। ‘পঁচা শামুকে পা কাঁটা’ প্রবাদটা বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের মনে বারে বারে উঠে আসছে। বিষয়টি স্বাভাবিক! যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দেখায় হেরে গেছে বাংলাদেশ।
সত্যই কি পঁচা শামুকে পা কাটলো? নাকি যোগ্য দল হিসাবে ভাল খেলেই জয় নিজেদের করেছে যুক্তরাষ্ট্র; তার উত্তরে অনেক বিকর্ত আছে। অন্য দিকে বলতে গেলে বাংলাদেশের সমর্থ ও দূর্বলতা এই ম্যাচে বাস্তব ভাবে ফুঁটে উঠেছে।
নৌকার ছিদ্র প্রথমেই বন্ধ করতে না পারলে অচিরেই তা ডুবে যায়। এখনি বাংলাদেশের হারের কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে বিশ^কাপে এমন হতাশা আবার ফিরে আসতে পারে বলেই মন্তব্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের।
প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মুখে বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছিল স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। শঙ্কা ছিল সিরিজ আয়োজন নিয়েও। তবে সেই শঙ্কা উড়িয়ে নির্ধারিত দিনেই মাঠে গড়ায় প্রথম টি-টোয়েন্টি। প্রাকৃতিক ঝড় থামলেও লিটন-শান্তদের বিবর্ণ পারফরম্যান্সে লজ্জার হারে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশের টেস্ট পূর্ব যুগে আইসিসি ট্রফিতে দুই দলের সাক্ষাৎ হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মঙ্গলবার প্রথমবার মুখোমুখি হয় তারা।
প্রথম দেখাতেই ঐতিহাসিক জয়ই তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা। টি-টোয়েন্টির র্যাঙ্কিংয়ে ১০ ধাপ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে আইসিসির সহযোগী সদস্য এই দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের চর্চার শুরুটা বহু আগে থেকে হলেও কখনোই ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। অভিবাসীদের হাত ধরে মার্কিন মুল্লুকে ক্রিকেটের যে নবযাত্রা, তারও খুব একটা প্রসার ঘটেনি।
ক্রিকেটকে বিশ্বায়নের অংশ হিসেবে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সহ-আয়োজক হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে আমেরিকা। যে কারণে বিশ্বকাপের আগে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ভরাডুবিতে ৫ উইকেটে হারের পর বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে টাইগার ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে পুরোনো প্রশ্নটা আরও জোরালো হচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা ১৬০-১৭০ রান করবেন আর বোলাররা সে পুঁজি দিয়ে ম্যাচ জেতাবেন—বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি জয়ের ফর্মুলা অনেকটা এমনই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই এমন ফর্মুলা বড় ধাক্কা খেয়েছে।
টপঅর্ডারের লিটন-শান্ত-সৌম্যদের ব্যর্থতার পর হৃদয়ের ফিফটিতে টেনেটুনে ১৫৩ রানের পুঁজি গড়েছিল বাংলাদেশ। যা ডিফেন্ড করতে পারেননি মুস্তাফিজ-সাকিবরা। ৩ বল বাকি থাকতেই টার্গেট পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজ ও বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও ঘুরে ফিরে অস্বস্তি ছিল টাইগারদের ব্যাটিংয়ে।
টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় কোনো ম্যাচেই বড় স্কোর গড়তে পারেনি লিটন-শান্তরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও একই চিত্র। মঙ্গলবার হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতেই দুই ওপেনার লিটন দাস (১৪) ও সৌম্য সরকারকে (২০) হারায় বাংলাদেশ। দলের স্কোর পঞ্চাশ ছুঁতেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তও।
প্রথম ১০ ওভারে রান ওঠে কেবল ৬৫। হৃদয়ের ৪৭ বলে ৫৮ আর মাহমুদউল্লাহর ২২ বলে ৩১ রানের মান বাঁচানো ইনিংসে দেড়শো পেরোয় বাংলাদেশ। পুঁজিটা মোটেও ডিফেন্ড করার মতো ছিল না সেটি হাড়ে হাড়ে বুঝিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটাররা।
২৮ বলে ৬২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে স্মরণীয় জয় এনে দেন হারমিত ও কোরি অ্যান্ডারসন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টপ অর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে আবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ- যুক্তরাষ্ট্র। শেষ ম্যাচ হবে ২৫ মে। সিরিজ শেষে ২৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেই আইসিসি নির্ধারিত ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে তারা মাঠে নামবে।
১ জুন ভারতের বিপক্ষে হবে দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ। বিশ্বকাপের লড়াই শুরুর আগে সবমিলিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের প্রস্তুতির জন্য পাচ্ছে ৫টি ম্যাচ। ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে শান্তদের বিশ্বকাপ। বাকি তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষ- দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। প্রথম দুটি ম্যাচ হবে যুক্তরাষ্ট্রে বাকি দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে।
স/এষ্