গুলিস্তানে দুই বাসের চাপায় পড়ে কৃষক জাহাঙ্গীর নিহতের ঘটনায় ঘাতক মনজিল পরিবহনের বাস চালক গ্রেফতার
এস, এম, মনির হোসেন জীবন: রাজধানীর গুলিস্তানে প্রতিযোগিতামূলক নিয়ন্ত্রণবিহীন দুই বাসের চাপায় পড়ে কৃষক জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫) নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসের চালককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ আল-আমিন (৩২)। সে মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ সদর থানার লাথারুন গ্রামের মোঃ ইউনুছ শেখের পুত্র।
র্যাব-৩ এর সদস্যরা রোববার দিবাগত রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর সদর এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আজ সোমবার র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস্ ও মিডিয়া শাখা) পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্হ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্স র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত ২ জুলাই ২০২২ তারিখ সকাল ৮ টা ২০ মিনিটের সময় ভিক্টিম মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫), পিতা-মৃত ইফাজ উদ্দিন মোল্লা, সাং-পূর্ব ভাটদি, থানা-বোয়ালমারী, জেলা-ফরিদপুর তার শ্যালক, ভাগিনা ও ভায়রাকে নিয়ে গোলাপশাহ মাজার থেকে পায়ে হেঁটে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে যাওয়ার জন্য রাস্তা পারা হচ্ছিল।
এসময় পথে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের দু’টি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেপরোয় গতিতে গাড়ী চালানোর কারনে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে একটি বাস ভিক্টিম মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫)কে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়। এসময় ঘাতক বাসের চাপায় পড়ে ঘটনাস্থলেই জাহাঙ্গীর মোল্লা মারা যায়। দুর্ঘটনার পর ঘাতক বাসের ড্রাইভার বাসটি রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এ দুর্ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার আরও বলেন, নিহত মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার পিতা জীবিত নেই। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ৪ শিশু কন্যা সন্তান নিয়ে তার অভাবের সংসার। তার বড় কন্যা সন্তানের বয়স ৮ এবং ছোট কন্যা সন্তানের বয়স ৪ মাস। জাহাঙ্গীর মোল্লা কৃষি কাজ করে তার পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে তার পুরো পরিবারটি সম্পূর্ণরূপে অসহায় এবং নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এদুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক ও পরিবহন আইন পল্টন মডেল থানার মামলা একটি মামলা দায়ের করেন। পল্টন মডেল থানার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটের সামনে পাকা রাস্তার উপর থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০ ঘাতক বাসটি জব্দ করা গেলেও ঘাতক গাড়ীর চালক পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত গাড়ি চালক মোঃ আল-আমিন র্যাবকে জানায় , সে কর্মজীবনের শুরুতে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে ৫ বছর কাজ করেছে। ২০১২ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বলাকা বাসে ৪ বছর যাবৎ হেলপারের কাজে নিযুক্ত ছিল। ২০১৭ সালে গাড়ির চালক হিসেবে সে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্ত হয় এবং মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হিসেবে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরিতে গাড়ি চালায়।
তিনি আরও জানান, গত ২ জুলাই ২০২২ তারিখ সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০ বাস নিয়ে চিটাগাং রোড থেকে রাজধানীর কামারপাড়ার উদ্দেশ্যে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তী স্টপেজে যে আগে পৌঁছাতে পারবে সে বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের তার বাসে নিতে পারবে, তাই পথিমধ্যে চালক গুলিস্তানে এসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতে থাকে।
এমতাবস্থায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহন এর চালক আল-আমিন তার চালিত গাড়ীটি অপর গাড়িটিকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে ভিক্টিম মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫)কে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়। এ ঘটনার পর সে জনরোষের ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে গিয়ে গা ডাকা দিয়ে আত্নগোপনে চলে যায়।
র্যাব জানান, গ্রেফতারকৃত গাড়ি চালক মোঃ আল-আমিন সে অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার ড্রাইভিং এর উপর কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই এবং সে কোন বৈধ লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। গাড়ীর হেলপার হিসেবে চালকের কাছ থেকে সে ড্রাইভিং শিখেছে। ট্রাফিক নিয়মাবলী সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই। যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে চালক ড্রাইভিং এর প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলে, তখনই গাড়ী দূর্ঘটনায় পতিত হয়
ভিক্টিমের আত্মীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিদেশ যাত্রার জন্য ভিক্টিমের শ্যালকের মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য গত শুক্রবার ০১ জুলাই ২০২২ ভিকটিম ঢাকায় এসে চকবাজার তার ভাগিনার বাসায় ওঠে। ঘটনার দিন শনিবার ২ জুলাই ২০২২ মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য তারা আবদুল্লাহপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ঐদিন সকাল ৮টা ২০ মিনিটের সময় ভিক্টিম তার শ্যালক, ভাগিনা ও ভায়রাকে নিয়ে গোলাপশাহ মাজার থেকে পায়ে হেঁটে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলেন।
একপর্যায়ে তার শ্যালক এবং ভাগিনা রাস্তা পার হয়ে যান, তার ভায়রা রাস্তার অপর প্রান্তে আইল্যান্ডের উপরে ছিল এবং ভিক্টিম তখন রাস্তার উপর ছিলেন। এসময় পথে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের দুইটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানোর কারনে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে একটি বাস ভিক্টিম মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়। উক্ত ঘাতক বাসের চাপায় পড়ে ঘটনাস্থলেই ভিক্টিমের মৃত্যু হয়।গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
স/অ