আবার শুরু হচ্ছে ভুটানে ভ্রমনের সুযোগ, তবে থাকছে কিছু বাধা
রাহুল রাজ ।। করোনার কারণে আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর হিমালয়ের কোলে অবস্থিত অপরূপ ভুটান বিদেশি পর্যটকদের জন্য নিজের দরজা আবার উন্মুক্ত করতে চলেছে। আজ শুক্রবার (২৩ ডিমেম্বর) থেকে বিদেশি নাগরিকরা ভুটানে যেতে পারবেন বলে সে দেশের ট্যুরিজম কাউন্সিল ঘোষণা করেছে। এই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানী থিম্পুতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ‘ব্র্যান্ড ভুটান’ নামে নতুন একটি ব্র্যান্ডও লঞ্চ করেছেন।
বিশ্বের মাত্র দুটো দেশের জন্য ভুটানের ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা আছে—আর সে দুটো দেশ হল বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকরা ফুন্টশলিংয়ে ভুটানের সড়ক প্রবেশপথে অথবা পারো বিমানবন্দরে নেমেও ভিসা সংগ্রহ করতে পারেন, কিংবা আগেভাগে অনলাইনেও আবেদন করতে পারেন। আর ভারতীয় নাগরিকদের ভুটানে যেতে ভিসা না-লাগলেও একটি বিশেষ ‘পারমিট’ নিতে হয়।
তবে বাংলাদেশ থেকে যারা ভুটানে বেড়াতে যেতে উৎসাহী, তাদের জন্য একটা দুঃসংবাদ হলো এখন ভুটান তাদের ‘সাসটেইনেবেল ডেভেলপমেন্ট ফি’ (এসডিএফ) অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এখন থেকে বিদেশি পর্যটকরা যতদিন ভুটানে থাকবেন, তাদের রোজ মাথাপিছু ২০০ ডলার করে এসডিএফ গুনতে হবে। অর্থাৎ মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ভুটান বেড়াতে গেলেও এই মাশুল বাবদ কোনও দম্পতিকে ২৮০০ ডলার অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। আগে এই ফি ছিল রোজ মাথাপিছু মাত্র ৬৫ ডলার।
আসলে ভুটানের নীতিই হল, তারা ‘মাস ট্যুরিজম’ বা গণহারে পর্যটনের পক্ষপাতী নয়। ঢালাওভাবে বিদেশি পর্যটকের বদলে কম সংখ্যায় ট্যুরিস্ট আসুক— এবং তারা বেশি পরিমাণে খরচ করুক, ভুটান এখন এই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে।
দিল্লিতে ভুটান ট্যুরিজম কাউন্সিলের শীর্ষ কর্মকর্তা ডামচো রিনজিনের কথায়, ‘বস্তুত হাই ভ্যালু, লো ভলিউম – এই নীতির ভিত্তিতেই আমরা পুরো পর্যটন খাতটাকে ঢেলে সাজাতে চাইছি।’
ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টানডি দোরজিও জানাচ্ছেন, ‘আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে চড়া হারে এসডিএফ নিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এটা খরচ করা হবে তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেই। অর্থাৎ অন্যভাবে বললে যেহেতু ভুটানের পরিবেশ, সংস্কৃতি, লোকজ জীবন রক্ষা করতে আমরা দায়বদ্ধ– তাই এই অর্থ দিয়ে আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাইবো।’
ফলে ভুটানে পর্যটন এখন অনেক ব্যয়বহুল হয়ে গেলেও সরকার অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছে – বিনিময়ে পর্যটকরা ‘কোয়ালিটি ট্যুরিজমে’র স্বাদ নিতে পারবেন। পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত সকলকে, যেমন হোটেল বা গেস্ট-হাউস ব্যবসায়ী, গাড়ির চালক, ট্যুর গাইড সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে খুব কঠোর ‘সার্টিফিকেশনের’র আওতায় আনা হয়েছে, যাতে তারা বিদেশিদের সেরা অভিজ্ঞতাটা দিতে পারেন।
নতুন ব্যবস্থায় আর একটি বড় পরিবর্তনও আনা হয়েছে, সেটি হলো আগে বিদেশি পর্যটকদের ভুটান সরকারের অনুমোদিত ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমেই হোটেল বা যাতায়াতের ব্যবস্থা বুক করতে হতো। কিন্তু এখন থেকে তারা সেটা ‘ইন্ডিপেন্ডেন্টলি’, অর্থাৎ স্বাধীনভাবে নিজেরাই করতে পারবেন।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ঢাকার কোনও বাসিন্দা যদি ভুটানে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন— ধরা যাক তিনি উত্তরায় নিজের বাসায় বসেই এক্সপিডিয়া, এয়ারবিএনবি বা বুকিং ডটকমে ভুটানের আস্তানা বুক করে নিতে পারবেন।
থিম্পু বা পুনাখায় কোনও ট্র্যাভেল এজেন্টকে ইমেইল করে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে না, সুযোগ থাকবে ইন্টারনেট থেকে সেরা ‘ডিল’ বেছে নেওয়ারও।
বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার পর্বতপ্রেমী পর্যটক যে ভুটানে বেড়াতে যেতে চান সেটা নতুন কোনও কথা নয় – কিন্তু চড়া হারে এসডিএফ তাদের উৎসাহে ভাঁটা ফেলে কি না, সেটাই এখন দেখার।
স/এষ্