মাধবপুরে শিল্পায়নে জাল জালিয়াতি ও ব্যাপক অনিয়মের ফিরিস্তি দেখবে কে?
এম এ কাদের, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ।। প্রতিনিধিঃ জাতীয় তথ্য বাতায়নের তথ্য মতে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় শিল্পকারখানা নামের তালিকা রয়েছে রপ্তানিমুখী ভারী ২৪ টি শিল্প ।
দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মাধবপুরে দ্রুত শিল্পায়নে কমছে কৃষিজমি ! বেড়েছে পরিবেশ দূষণ-দুর্ভোগ ! দিন দিন জমি জমার কাগজ পত্র জাল জালিয়াতির চলছে মহা উৎসব ! কৃষি জমি’কে অকৃষি দেখিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্হাপন। কোটি কোটি টাকার রফাদফার মাধ্যমে হাসিল হচ্ছে কোম্পানির মালিকদের চাহিদা।
বেশ কিছু দফতরের অসাধু কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জমি জমার দাগ খতিয়ান, শ্রেণী পরিবর্তন, মালিকানা পরিবর্তন, গায়েবি দলিল, জীবিত ব্যক্তি’কে মৃত, মৃত ব্যক্তি’কে জীবিত দেখিয়ে তৈরি করে দিচ্ছে জমির মালিকানার প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র। আর এই সুবাদে জমির প্রকৃত মালিক বনে যাচ্ছেন কোম্পানির মালিকরা।
দলিল মূলে ক্রয়কৃত জমির পরিমানের চেয়ে অতিরিক্ত জমি ভোগ দখল করে যাচ্ছে কোম্পানির মালিকরা। অভিনব পন্থায় প্রতারণার মাধ্যমে জমির মালিকানা পরিবর্তন করে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
আবার কোন কোন জমির প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে ক্রয় না করে ভুয়া মালিক বানিয়ে সাব-রেজিস্টার অফিসের যোগসাজশে অবৈধ দলিল সম্পাদনা করে দখল করে নিয়েছেন শিল্প মালিকরা। প্রকৃত জমির মালিকের সকল কাগজ পত্র ভূমি সংশ্লিষ্ট অফিসের সকল দপ্তরের রেকর্ডীয় বালাম থেকে নাম নিশানা মুছে ফেলে কোম্পানীর নামে করে নিয়েছেন। বৈধ মালিক দাবি করার জন্য বানিয়ে নিচ্ছেন মাঠ পর্চা, দাগ খতিয়ানসহ মালিকানার সকল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র।
জমির প্রকৃত মালিকের খতিয়ান সরাসরি কেটে কোম্পানির মালিকের নামে হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি। একই খতিয়ানে অধিকতর দাগ বসিয়ে মাঠ পর্চাসহ সকল কাগজ পত্রে কোম্পানি’কে প্রকৃত পক্ষে মালিক সাজিয়ে দেওয়ার হিড়িক রয়েছে। আবার কোন কোন জমি ক্রয়কালে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ দশ জন থাকা সত্যেও বিনা বাটোয়ারায় দুই জন ওয়ারিশের কাছ থেকে দলিল নিয়ে ভোগ দখল করে যাচ্ছেন কোম্পানির মালিকগন। বাকি অন্যান্য ওয়ারিশদের কাছ থেকে কোন প্রকার দলিল সম্পাদন না করেই উক্ত জায়গা নামজারি করিয়েছেন কোম্পানির নামে।
তিন ফসলা কৃষি জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কোন প্রকার বেগ পেতে হচ্ছে না কোম্পানির মালিকদের। শিল্প কারখানা স্হাপনের নীতিমালার নিয়মনীতি কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় গড়ে উঠছে রপ্তানিমূখী শিল্প কারখানা।
অসাধ্য কাজ সাধন করা কোম্পানির মালিকদের পক্ষে তা কোন বিষয়-ই নয়। স্হানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারিদের যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় অনিয়ম ও ব্যাপক জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গড়ে উঠেছে শিল্প সাম্রাজ্য। স্হানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে কোম্পানির মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠায়, স্হানীয় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার তৈরি হয়েছে।
কোম্পানির মালিক পক্ষের সাথে হাতে-হাত মিলেয়ে অবৈধভাবে সর্বচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন যে সকল দপ্তরে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। স্হানীয় প্রশাসন, দলিল লিখক সমিতি, সাব-রেজিস্ট্রার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), জেলা প্রশাসক, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ও ভূমি মন্ত্রণালয়।
উপরে উল্লেখিত দপ্তর সমূহের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মন তুষ্ট করে, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বনে যাচ্ছেন জমির প্রকৃত মালিক কোম্পানির মালিকগন। আর অনিয়ম ও জাল জালিয়াতির সকল কাগজ পত্র তৈরী করা ব্যক্তিদের হাতে, কোম্পানীর মালিকদের পক্ষ থেকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আলাদিনের চেরাগ। তারাও শূন্য থেকে হয়ে যাচ্ছেন ধনকুবের মালিক। যা ঘটে চলছে মাধবপুর উপজেলায় গড়ে উঠা বেশ কিছু শিল্প কারখানার দ্বারা।
বিশেষ করে এই কর্মকান্ড গুলো সর্বচ্চ সংঘটিত হয়েছে বিগত আওয়ামীলীগ সরকার শেখ হাসিনা ক্ষমতা থাকা কালীন সময়ের মধ্যে। কোন কোন কোম্পানির মালিক শেখ হাসিনার সঙ্গে ফটো সেশনের চিত্র’কে কাজে লাগিয়ে, ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে, এমপি মন্ত্রীদের প্রভাব খাটিয়ে, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে অসংখ্য জমি-জমা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কিভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা, এক এক জন ভূমিদুস্যুতে পরিনত হয়েছেন তারই আদ্যপান্ত্য ধারাবাহিক পর্বে তুলে ধরা হবে।
স/এস্