টঙ্গীর তুরাগতীরে ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু বিশ্ব ইজতেমা
শাহজাহান শোভন, টঙ্গী থেকে : গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আগামী ১৩ জানুয়ারী থেকে শুরু বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিরা।
গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৬০ একর জায়গায় বিশাল সামিয়ানা টানানোর কাজ প্রায় শেষ। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৈরি করছেন পন্টুন, যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল ময়দানে খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টানানোর কাজ। এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
এদিকে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু ও শান্তি পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গতকাল শুক্রবার বিকালে ইজতেমা ময়দানে চূড়ান্ত প্রস্তুতি মূলক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান সভায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ইজতেমার আয়োজক কমিটির তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিগণ, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি ইজতেমা আয়োজনে নিয়োজিত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য ধন্যবাদ দেন।
আগামী ১৩ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তর্জমা করা হবে।
শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে।রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান বলেন, নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেওয়া, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে সার্বক্ষণিক একাধিক টিমকাজ করবে।
মুসল্লিদের যে কোনো সমস্যায় তারা কাজ করে যাবে। জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নি নির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ টহলও থাকবে। এ সময় তিনি বলেন, দুই পর্বের ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও ইজতেমা আয়োজনে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘দুই পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি।
উল্লেখ্য এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে আগামী ১৩ জানুয়ারি, ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই পর্ব। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব এবং ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
স/অ