ঝালকাঠি-১ আসনে আসতে পারে বড় চমক, নতুন নেতৃত্বের পাল্লা ভারি
ঝালকাঠি প্রতিনিধি ।। জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন আমির হোসেন আমু। শুধু হেরে গিয়েছিলেন বললে কম বলা হবে, বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান ওমরও তাঁকে টপকে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। পরে অবশ্য ঝালকাঠি-২ আসন থেকে এমপি ও মন্ত্রী হয়েছিলেন আমির হোসেন আমু।
তবে ১৯৯৬ সালের সেই দাগ এখনো শুকায়নি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এবার ঝালকাঠি-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন আমির হোসেন আমু। যদি তা-ই হয় এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে ভোটের মাঠে আমুর লড়াই হবে বিএনপির শাহজাহান ওমরের সঙ্গে।
এর মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগ্রহ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তনির্ভর। এ কারণে মাঠে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না দলটির নেতা-কর্মীদের। তবে আওয়ামী লীগ চলছে জোর কদমে। রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলায় দলটির তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পোস্টার-ফেস্টুন টাঙিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের উপস্থিতি।
আমির হোসেন আমু এ আসন থেকে মনোনয়ন না চাইলে মনোনয়ন চাইতে পারেন বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুন। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি তাঁর দখলে। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন, পাঁচবারের নির্বাচিত সিআইপি,রাজপুর উপজেলা, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম লিটন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির, ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম ড. এম এ হান্নান ফিরোজের সহধর্মিণী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল এবং আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য আবুল কাসেম সীমান্ত।
সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম জামাল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকতসহ আরও কয়েকজন নেতা বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী, ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন হবে।
অপর দিকে তরুণদের মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে সিআইপি মো: রফিকুল ইসলাম লিটন। তরুণ সমাজের সঙ্গে সক্ষতা বজায় রাখার সঙ্গে এলাকার সামাজিক উন্নায়নে বিশেষ ভূমিকারেখে ইতোমধ্যে সবার প্রসংশা খুঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে রফিকুল ইসলাম লিটন এই আসনের ট্রামকার্ড হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারনা করেছেন এলাকার সাধারণ ভোটারেরা।
এদিকে এমপি হারুন দুই উপজেলায় যোগাযোগ, মডেল মসজিদ, আমুয়া, পুটিয়াখালি সেতু, রাজাপুর-কাঠালিয়া সড়কসহ বিভিন্ন উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।
এ কারণে এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। যদিও একটি সূত্র জানাচ্ছে তিনি শারিরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে পরিবারের কাউকে এই আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইতে পারেন।
তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বৈরী সম্পর্কের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই ওপেন সিক্রেট। দুই উপজেলার মূল ধারার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ বা সুসম্পর্ক নেই বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির জানান, আগামী নির্বাচনে নৌকায় যাতে জনগণ ভোট দেন, সে জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার চালানো হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতা-কর্মীদের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আমির হোসেন আমু।
আসনটি শাহজাহান ওমরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপরই সবার ভরসা। এ কারণে নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় তাঁদের তেমন তৎপরতাও নেই।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন জানান, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বার্তা রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির।
এ আসনে ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৫ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৯ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৮ হাজার ৯৮৬ জন।
স/এষ্